প্রবীণদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা: নতুন দক্ষতা অর্জনের ৫টি সহজ পথ

webmaster

노인 직업 교육 - **Digital Empowerment for a Bengali Elder**
    "A heartwarming, brightly lit, medium shot of an eld...

বয়স বাড়লে কি জীবন থেমে যায়? কর্মজীবনের পাট চুকিয়ে ঘরে বসে থাকাটা কি একমাত্র পথ? আমি নিজে কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না!

আমাদের সমাজে প্রবীণরা জ্ঞানের ভান্ডার, অভিজ্ঞতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁদের এই অমূল্য সম্পদকে কাজে লাগানোর সুযোগ আমরা কেন দেব না? আজকাল এমন চমৎকার কিছু বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে, যা প্রবীণদের নতুন করে কর্মজীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে, তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে। শুধু আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়াই নয়, এর মাধ্যমে তাঁরা সমাজে সক্রিয় থাকতে পারবেন, নতুন কিছু শিখতে পারবেন এবং নিজেদের আরও বেশি মূল্যবান মনে করতে পারবেন। এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে কিভাবে আমাদের প্রবীণরা তাঁদের জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারেন, চলুন নির্ভুলভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বয়স শুধু একটি সংখ্যা: নতুন পথের হাতছানি

노인 직업 교육 - **Digital Empowerment for a Bengali Elder**
    "A heartwarming, brightly lit, medium shot of an eld...

বয়সকে কেবল ক্যালেন্ডারের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখাটা আমার কাছে এক ধরনের অন্যায় বলেই মনে হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যাদের বয়স বেড়েছে, তাদের জীবন অভিজ্ঞতার ভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও পরিণত। তাই কর্মজীবনের আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষ হয়ে গেলেও জীবন থেমে যায়, এটা ভাবা বোকামি। বরং এটাই সুযোগ জীবনের সেই অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণ করার, যা হয়তো কর্মব্যস্ততার কারণে এতদিন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অনেকে হয়তো ভাবেন, এই বয়সে নতুন কিছু শেখা কঠিন। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, সঠিক দিকনির্দেশনা আর একটু ইচ্ছা থাকলে যেকোনো বয়সেই নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা সম্ভব। আমার পাশের বাড়ির মাসি, যিনি তার ৭০ বছর বয়সে এসেও অনলাইন ব্যবসার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তার চোখে যে আত্মবিশ্বাসের ঝলক দেখেছি, তা আমাকে আজও অনুপ্রাণিত করে। তিনি এখন ঘরে বসেই নিজের তৈরি হস্তশিল্প বিক্রি করেন, আর নিজের খরচ নিজেই চালান। এটা শুধু আর্থিক স্বাবলম্বিতা নয়, এটা এক ধরনের মানসিক পরিতৃপ্তি। নিজেকে সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে দেখাটা জীবনের সেরা উপহারগুলোর মধ্যে একটা। তাই, আসুন আমরা বয়সকে সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনের প্রতিটি ধাপকে উপভোগ করার নতুন পথ খুঁজে নিই। আমাদের প্রবীণরা শুধু আমাদের পরিবারের সম্পদ নন, তারা সমাজেরও অমূল্য রত্ন।

নতুন শখকে আয়ে রূপান্তরিত করা

অনেকেই অবসর সময়ে নানান শখ পূরণ করেন – বাগান করা, সেলাই করা, বই পড়া বা রান্না করা। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনার এই শখগুলোই আপনার জন্য আয়ের উৎস হয়ে উঠতে পারে? আমার এক পরিচিত কাকা, যিনি সারা জীবন শিক্ষকতা করেছেন, অবসরের পর তার শখ ছিল নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করা। এখন তিনি ছোট পরিসরে একটি অনলাইন ফুড ডেলিভারি ব্যবসা শুরু করেছেন। তার হাতের তৈরি আচার, পিঠা বা বাঙালি ঘরানার খাবারগুলোর এত চাহিদা যে তিনি এখন হিমশিম খাচ্ছেন অর্ডার সামলাতে। তার মতে, “নিজের পছন্দের কাজ করে উপার্জন করাটা একটা আলাদা আনন্দ।” এই ধরনের উদ্যোগগুলো শুধু আর্থিক নিরাপত্তা দেয় না, বরং মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে। এটি প্রমাণ করে যে, বয়স কোনো বাধা নয় যখন নিজের প্যাশনকে কাজে লাগানো যায়।

মানসিক অবসাদ দূর করার সহজ উপায়

কর্মজীবন থেকে অবসরের পর অনেকে নিজেকে একা এবং অপ্রয়োজনীয় মনে করতে শুরু করেন, যা প্রায়শই মানসিক অবসাদের কারণ হয়। আমি দেখেছি, যখন মানুষ নতুন কোনো কাজে নিজেদের যুক্ত রাখে, তখন তাদের মন আরও সতেজ থাকে। নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের জন্য একটি চমৎকার ব্যায়াম। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখে। যখন আপনি নতুন কিছু শিখবেন, নতুন মানুষের সাথে মিশবেন, তখন আপনার সামাজিক পরিধিও বাড়বে। এটি কেবল আপনার একাকীত্ব দূর করবে না, বরং আপনাকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করবে। এই ধরনের মানসিক উদ্দীপনা আসলে জীবনের প্রতি নতুন আগ্রহ তৈরি করে।

প্রশিক্ষণ মানেই নতুন দক্ষতা, নতুন সুযোগ

বর্তমান সময়ে কর্মজীবনের গতি প্রকৃতি অনেক দ্রুত পাল্টাচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে নতুন কিছু শেখাটা জরুরি, শুধু তরুণদের জন্য নয়, প্রবীণদের জন্যও। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, অনেক প্রবীণ নতুন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের এতটাই শাণিত করেছেন যে তারা তরুণদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে পারছেন। এটা শুধু চাকরির বাজারে টিকে থাকার বিষয় নয়, এটা নিজেদেরকে আরও সক্ষম করে তোলার বিষয়। ধরুন, আপনি হয়তো সারা জীবন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করেছেন, কিন্তু এখন অবসর সময়ে আপনার অন্য কোনো বিষয়ে আগ্রহ জন্মেছে। এই প্রশিক্ষণগুলো আপনাকে সেই আগ্রহকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সুযোগ করে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, আমার এক আত্মীয়, যিনি ব্যাংক থেকে অবসর নিয়েছেন, এখন তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখছেন। তিনি জানান, এই কাজটি তাকে নতুনভাবে চিন্তা করতে শেখাচ্ছে এবং তার সৃজনশীলতাকে বিকশিত করছে। তার তৈরি করা কিছু ডিজাইন আমি দেখেছি, যা সত্যিই মন মুগ্ধ করার মতো। তাই, প্রশিক্ষণকে কেবল চাকরির হাতিয়ার হিসেবে না দেখে, নতুন কিছু শেখার এবং নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত।

জনপ্রিয় প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোর পরিচিতি

আজকাল প্রবীণদের জন্য অনেক ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হয়েছে, যা তাদের দক্ষতা বাড়াতে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং, কম্পিউটার বেসিক, ওয়েব ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন টিউশন, কাউন্সেলিং, হস্তশিল্প তৈরি, বাগান পরিচর্যা, এবং ছোট ব্যবসা পরিচালনার মতো কোর্সগুলো বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি কোর্সের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং চাহিদা রয়েছে। যেমন, ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই বিভিন্ন কোম্পানির সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট বা কনটেন্ট তৈরি করার কাজ করতে পারেন। কম্পিউটার বেসিক কোর্স আপনাকে অনলাইন ব্যাংকিং, ইমেল ব্যবহার, বা ভিডিও কল করার মতো দৈনন্দিন কাজগুলো সহজে করতে শেখাবে। এই কোর্সগুলো প্রবীণদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়, যেখানে শেখার পদ্ধতি সহজ এবং ধীরগতির হয়, যাতে তারা সহজে সবকিছু আয়ত্ত করতে পারেন।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্বাচন: কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

সঠিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, একটি ভালো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আপনাকে শুধু দক্ষতা দেবে না, বরং আপনাকে শেখার জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশও দেবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্বাচনের সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। প্রথমত, কেন্দ্রটি আপনার বাড়ির কাছাকাছি হওয়া উচিত, যাতে যাতায়াতে সুবিধা হয়। দ্বিতীয়ত, প্রশিক্ষকদের অভিজ্ঞতা এবং শেখানোর পদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিন। তৃতীয়ত, ব্যাচের আকার কেমন, সেটা দেখুন। ছোট ব্যাচে ব্যক্তিগত মনোযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চতুর্থত, প্রশিক্ষণের শেষে কোনো সার্টিফিকেট বা প্লেসমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স দেয় কিনা, তা জেনে নিন। সবশেষে, ফি কাঠামো এবং পেমেন্ট অপশনগুলো ভালোভাবে বুঝে নিন। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রবীণদের জন্য বিশেষ ছাড় বা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে। আমি সবসময় বলি, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

Advertisement

ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবীণদের জয়যাত্রা

আজকের দিনে ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে। আর এই ডিজিটাল বিপ্লব থেকে প্রবীণদের দূরে রাখাটা একেবারেই ঠিক নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, যখন একজন প্রবীণ মানুষ স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার করতে শেখেন, তখন তার মুখে যে হাসি ফোটে, তা অমূল্য। কারণ এই প্রযুক্তি তাদের শুধুমাত্র নতুন কিছু শেখার সুযোগ দিচ্ছে না, বরং তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন, স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ, বা বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। আমার দাদু, যিনি একসময় কম্পিউটারকে ভিনগ্রহের কোনো বস্তু মনে করতেন, এখন নিয়মিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল পড়েন এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে বিদেশ থাকা তার নাতি-নাতনিদের সাথে কথা বলেন। তার এই পরিবর্তন দেখে আমার মনে হয়েছে, আসলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয় যদি শেখার ইচ্ছাটা থাকে। প্রবীণদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ডিজিটাল লিটারেসি কোর্সগুলো তাদের এই নতুন দুনিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দারুণ কার্যকর। এই কোর্সগুলো তাদের শুধু প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষমই করে না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে। তারা যখন নিজেদের দৈনন্দিন কাজগুলো অনলাইনে করতে পারেন, তখন নিজেদেরকে আরও বেশি স্বাধীন এবং স্বাবলম্বী মনে করেন।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নতুন দিগন্ত

প্রবীণদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন অসংখ্য নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে। ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এগুলো শেখার এবং উপার্জনেরও মাধ্যম। আমার পরিচিত একজন মাসি, যিনি অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন, এখন ইউটিউবে তার রান্নার ভিডিও পোস্ট করেন। তার চ্যানেলের দর্শক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং তিনি এখন ইউটিউব থেকে নিয়মিত আয় করেন। আবার অনেকে ই-কমার্স সাইটগুলোতে নিজেদের তৈরি হস্তশিল্প, পোশাক বা অর্গানিক পণ্য বিক্রি করছেন। এটি তাদের ঘরে বসেই কাজ করার এবং আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্মগুলো প্রবীণদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ে শেখার সুযোগ দিচ্ছে, যা তাদের নতুন দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে প্রবীণরা শুধু নিজেদের পরিচিতির বাইরেও একটি বৃহত্তর বিশ্বের সাথে যুক্ত হতে পারছেন।

সাইবার নিরাপত্তা: প্রবীণদের জন্য জরুরি পরামর্শ

ডিজিটাল দুনিয়ায় বিচরণ করার সময় সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমি দেখেছি, প্রবীণরা অনেক সময় অনলাইন প্রতারণার শিকার হন কারণ তারা প্রযুক্তির ঝুঁকি সম্পর্কে ততটা অবগত নন। তাই ডিজিটাল শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞান দেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, অপরিচিত লিঙ্কে ক্লিক না করা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করা, এবং সন্দেহজনক ফোন কল বা ইমেইল সম্পর্কে সতর্ক থাকা। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো ফোন করে আপনার পাসওয়ার্ড বা ওটিপি জানতে চাইবে না – এই সাধারণ জ্ঞানগুলো তাদের মনে গেঁথে দেওয়া দরকার। আমি সবসময় বলি, অনলাইনে কোনো কিছুতে ক্লিক করার আগে দু’বার ভাবুন। প্রয়োজনে পরিবারের কমবয়সী সদস্যদের সাহায্য নিন। সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করলে ডিজিটাল দুনিয়া আপনার জন্য নিরাপদ এবং উপকারী হয়ে উঠবে।

শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক তৃপ্তি

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মনে একটা চিন্তা বাসা বাঁধে – শারীরিক সক্ষমতা কমে আসছে, কর্মজীবন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি নিজে দেখেছি, নতুন কিছু শেখার বা করার আগ্রহ মানুষকে শুধু মানসিকভাবেই নয়, শারীরিকভাবেও চাঙ্গা রাখে। যখন একজন প্রবীণ মানুষ কোনো প্রশিক্ষণে অংশ নেন, তখন তাকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়, নতুন মানুষের সাথে মিশতে হয়। এটা তার দৈনন্দিন জীবনে একটা রুটিন নিয়ে আসে, যা অলসতা দূর করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াটি তাদের মধ্যে একটা নতুন উদ্দীপনা তৈরি করে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুবই জরুরি। যেমন, বাগান পরিচর্যার প্রশিক্ষণ নিলে আপনাকে বাগানে কাজ করতে হবে, যা এক প্রকার শারীরিক ব্যায়ামের কাজ করে। আবার কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিলে আঙুলের সঞ্চালন বা মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ে। এই ধরনের সক্রিয় জীবনযাপন মানুষকে দীর্ঘকাল সুস্থ এবং প্রাণবন্ত থাকতে সাহায্য করে। আমার এক পরিচিত দাদু, যিনি অবসর জীবন কাটানোর সময় একটু বিষণ্ণ থাকতেন, তিনি এখন একটি স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে কম্পিউটার শেখানোর কাজ করেন। তিনি বলেন, “ছেলেমেয়েদের শেখাতে গিয়ে আমি নিজেই অনেক কিছু শিখি, আর এই বয়সেও আমি যে কাজে লাগছি, সেটা আমাকে মানসিক শান্তি দেয়।”

স্বেচ্ছাসেবকের কাজ: সমাজে অবদান রাখার সুযোগ

অনেক প্রবীণ আছেন যারা আর্থিক উপার্জনের চেয়েও সমাজে অবদান রাখতে বেশি আগ্রহী। স্বেচ্ছাসেবকের কাজ তাদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ। আমি মনে করি, তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সমাজের জন্য অমূল্য সম্পদ। তারা বিভিন্ন এনজিও, স্কুল, হাসপাতাল বা স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে পারেন। যেমন, ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ানো, হাসপাতালের রোগীদের সেবা করা, বা পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার অভিযানে অংশ নেওয়া। এই ধরনের কাজগুলো তাদের শুধু ব্যস্ত রাখে না, বরং তাদের মধ্যে পরিতৃপ্তি এবং আত্মমর্যাদাবোধ বাড়ায়। যখন তারা দেখেন যে তাদের কাজের মাধ্যমে সমাজের উপকার হচ্ছে, তখন তারা নিজেদেরকে আরও বেশি মূল্যবান মনে করেন। এটি এক ধরনের সামাজিক সংযুক্তির অনুভূতি দেয়, যা একাকীত্ব দূর করতে সাহায্য করে। আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়, যিনি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, এখন একটি অনাথ আশ্রমে শিশুদের বিনা পয়সায় পড়ান। তিনি বলেন, “এই বয়সে এসেও যখন দেখি আমার পড়ানো ছেলেমেয়েরা ভালো ফল করছে, তখন মনে হয় জীবনটা সার্থক।”

শরীরচর্চা ও মেডিটেশন: সুস্থ থাকার চাবিকাঠি

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য শরীরচর্চা ও মেডিটেশন অত্যন্ত জরুরি। আমি সবসময় প্রবীণদের নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, হাঁটাচলা বা যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দিই। এটি তাদের পেশী ও হাড়কে শক্তিশালী রাখে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। আবার মেডিটেশন বা প্রাণায়াম মানুষকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। এটি মনকে শান্ত করে, মনোযোগ বাড়ায় এবং ঘুমের মান উন্নত করে। অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রবীণদের জন্য এই ধরনের কোর্স অফার করে, যেখানে প্রশিক্ষকরা ধাপে ধাপে সবকিছু শেখান। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যখন আপনার শরীর ও মন সুস্থ থাকবে, তখন নতুন কিছু শেখার আগ্রহও বেড়ে যাবে। তাই, শুধু বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নয়, বরং শরীর ও মনের যত্নেও সমানভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিত। সুস্থ শরীরেই সুস্থ মন বাস করে, আর সেই সুস্থ মনই নতুন কিছু শেখার বা করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

Advertisement

ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে লাভজনক উদ্যোগ

노인 직업 교육 - **Artisanal Creations by a Bengali Elder**
    "A close-up, well-lit shot of an elderly Bengali woma...

অনেক সময় আমাদের শখ বা ব্যক্তিগত আগ্রহই হয়ে উঠতে পারে এক দারুণ আয়ের উৎস। বিশেষ করে প্রবীণদের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি প্রযোজ্য। কারণ তাদের কাছে সারা জীবনের অভিজ্ঞতা, ধৈর্য এবং সময় আছে যা তরুণ প্রজন্মের কাছে বিরল। আমি নিজে এমন অনেক প্রবীণকে দেখেছি যারা নিজেদের দীর্ঘদিনের শখকে সফল ব্যবসায় রূপান্তরিত করেছেন। যেমন, একজন নারী যিনি সারাজীবন সেলাই করতে ভালোবাসতেন, তিনি এখন অনলাইনে নিজের হাতে তৈরি নকশী কাঁথা বা পোশাক বিক্রি করেন। তার পণ্যগুলো এত নিখুঁত আর মানসম্পন্ন যে ক্রেতারা সাগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। এটা শুধু তার আর্থিক স্বাবলম্বীই করছে না, বরং তাকে সমাজের কাছে আরও বেশি সম্মানিত করছে। এই ধরনের উদ্যোগের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, আপনি নিজের পছন্দের কাজ করছেন, তাই কাজটা আপনার কাছে বোঝা মনে হবে না, বরং আনন্দের উৎস হবে। এর ফলে কাজের প্রতি আপনার নিষ্ঠা এবং সৃজনশীলতা আরও বাড়বে। ছোট পরিসরে শুরু করে ধীরে ধীরে এটিকে বড় করা সম্ভব। এতে ঝুঁকি কম থাকে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের বাজার

আমাদের দেশে হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের এক বিশাল বাজার রয়েছে। আর এই কাজটি প্রবীণদের জন্য খুবই উপযুক্ত। কাঁথা সেলাই, মাটির জিনিস তৈরি, বাঁশের কাজ, পুঁতির গয়না তৈরি, পাটজাত পণ্য – এমন হাজারো জিনিস আছে যা প্রবীণরা খুব নিপুণভাবে তৈরি করতে পারেন। এই পণ্যগুলো দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমার এক চাচা, যিনি অবসর নেওয়ার পর বাঁশের শৌখিন জিনিস তৈরি করতে শুরু করেছেন, তার তৈরি পণ্যগুলো এখন বিভিন্ন মেলায় এবং অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, “আমার এই কাজটা আমাকে আনন্দ দেয় আর একই সাথে দুটো পয়সাও আসে, মন্দ কি?” এই ধরনের উদ্যোগগুলো শুধু আর্থিক উপার্জনের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেও সাহায্য করে। আপনি নিজের তৈরি পণ্য স্থানীয় বাজার, মেলা বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করতে পারেন।

খাবার তৈরি ও পরিবেশন ব্যবসা

খাবার তৈরি ও পরিবেশন ব্যবসা প্রবীণদের জন্য আরেকটি জনপ্রিয় এবং লাভজনক বিকল্প। আমাদের প্রবীণদের হাতে এমন অনেক ঐতিহ্যবাহী রেসিপি আছে যা নতুন প্রজন্ম হয়তো ভুলেই গেছে। তারা এই রেসিপিগুলোকে কাজে লাগিয়ে ছোট পরিসরে কেটারিং ব্যবসা, আচার তৈরি, পিঠা তৈরি বা টিফিন সরবরাহ করতে পারেন। আমার পরিচিত একজন খালা, যিনি অবসরের পর নিজের হাতে তৈরি বিভিন্ন প্রকার আচার বিক্রি করেন। তার আচারের স্বাদ এতটাই জনপ্রিয় যে ক্রেতারা দূর দূরান্ত থেকে আসেন। তিনি বলেন, “আমি আমার পুরোনো দিনের রেসিপিগুলোকে কাজে লাগিয়েছি, আর মানুষ এত পছন্দ করবে ভাবিনি।” এই ব্যবসা শুরু করার জন্য খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না এবং ঘরে বসেই এটি পরিচালনা করা সম্ভব। সামাজিক অনুষ্ঠান, অফিস বা শিক্ষার্থীদের জন্য টিফিন সরবরাহ করেও ভালো আয় করা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি

মানুষ সামাজিক জীব, আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়াটা একাকীত্ব ও বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে। যখন একজন প্রবীণ নতুন কোনো প্রশিক্ষণে অংশ নেন বা নতুন কোনো কাজে যুক্ত হন, তখন তিনি নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হন, নতুন বন্ধু তৈরি করেন। এই নতুন সম্পর্কগুলো তাদের জীবনে এক নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে আসে। এটি শুধু তাদের একাকীত্ব দূর করে না, বরং তাদের আত্মমর্যাদাবোধ বাড়াতেও সাহায্য করে। আমি দেখেছি, যখন একজন প্রবীণ মানুষ নতুন কিছু শিখে নিজেকে সমাজের কাছে প্রমাণ করতে পারেন, তখন তাদের চোখে যে আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি দেখি, তা সত্যিই অন্যরকম। তারা নিজেদেরকে আরও বেশি মূল্যবান এবং সক্ষম মনে করেন। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে অবদান রাখতে পারাটা জীবনের শেষ সময়ে এসেও মানুষকে এক বিশেষ আনন্দ দেয়। এই ধরনের সামাজিক মেলামেশা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দেয় এবং তারা একে অপরের থেকে নতুন কিছু শিখতে পারেন।

কমিউনিটি সেন্টারে সক্রিয় অংশগ্রহণ

কমিউনিটি সেন্টারগুলো প্রবীণদের জন্য সামাজিক যোগাযোগের এক চমৎকার মাধ্যম। এই সেন্টারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা, সেমিনার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমি সবসময় প্রবীণদের এই ধরনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে উৎসাহিত করি। এখানে তারা নিজেদের সমবয়সী মানুষদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন, নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন এবং নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারেন। অনেক কমিউনিটি সেন্টার প্রবীণদের জন্য বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সেরও আয়োজন করে থাকে। যেমন, স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মশালা, কম্পিউটার বেসিক কোর্স বা গান-বাজনার ক্লাস। এই ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শুধু তাদের সময় কাটানোর একটা ভালো উপায় নয়, বরং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে। যখন তারা নিজেদেরকে একটি সক্রিয় সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে দেখতে পান, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি এবং আনন্দ তৈরি হয়।

অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া: মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম

প্রবীণদের কাছে রয়েছে জীবনের বিশাল অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান, যা নতুন প্রজন্মের জন্য খুবই মূল্যবান হতে পারে। মেন্টরশিপ প্রোগ্রামগুলো প্রবীণদের জন্য এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার এক দারুণ সুযোগ। আমি মনে করি, এই ধরনের প্রোগ্রামগুলো সমাজের জন্য খুবই উপকারী। এখানে প্রবীণরা তরুণ উদ্যোক্তাদের, শিক্ষার্থীদের বা নতুন কর্মজীবীদের মেন্টর হিসেবে কাজ করতে পারেন। তারা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে সাহায্য করতে পারেন। এটি শুধু তরুণদের উপকৃত করবে না, বরং প্রবীণদেরও নিজেদেরকে সমাজের কাছে আরও বেশি মূল্যবান এবং সম্মানিত অনুভব করতে সাহায্য করবে। যখন তারা দেখেন যে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অন্যদের উপকারে আসছে, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। এটি এক ধরনের পারস্পরিক উপকারিতার সম্পর্ক তৈরি করে, যেখানে উভয় প্রজন্মই একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারে।

Advertisement

আপনার জন্য সেরা প্রশিক্ষণটি কীভাবে বাছবেন?

এত ধরনের প্রশিক্ষণ আর সুযোগের ভিড়ে হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্পটি কোনটি? আমি মনে করি, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা উচিত। প্রথমত, আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহ কিসে? আপনি কোন কাজটি করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? আপনার শখ কী? দ্বিতীয়ত, আপনার শারীরিক সক্ষমতা কেমন? আপনি কি এমন কোনো কাজ করতে চান যার জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, নাকি বসে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন? তৃতীয়ত, আপনি কি আর্থিক উপার্জনের জন্য কাজ করতে চান নাকি শুধু শখের বশে কিছু শিখতে চান? চতুর্থত, আপনার জন্য কতটা সময় দেওয়া সম্ভব? সবশেষে, আপনার আশেপাশে কোন ধরনের প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে এবং সেগুলোর মান কেমন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আমার এক প্রতিবেশী আন্টি, যিনি রান্না করতে খুব ভালোবাসেন, তিনি এখন একটি ছোট অনলাইন ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি তার আগ্রহ এবং শারীরিক সক্ষমতার কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি সবসময় বলি, তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজের সাথে সময় কাটান এবং নিজের ভালো লাগাগুলোকে খুঁজে বের করুন।

নিজের আগ্রহ ও দক্ষতার মূল্যায়ন

সঠিক প্রশিক্ষণ বেছে নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো নিজের আগ্রহ এবং দক্ষতার মূল্যায়ন করা। আমি দেখেছি, যখন মানুষ নিজের পছন্দের কাজটি করে, তখন সেটিতে তারা সেরাটা দিতে পারে। তাই প্রথমে আপনার সেই শখ বা আগ্রহগুলো খুঁজে বের করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়। আপনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান কোন ক্ষেত্রে রয়েছে, সেদিকেও নজর দিন। হয়তো আপনি সারা জীবন শিক্ষকতা করেছেন, তাহলে অনলাইন টিউশন বা কন্টেন্ট রাইটিং আপনার জন্য ভালো হতে পারে। আবার হয়তো আপনি বাগান করতে ভালোবাসেন, তাহলে বাগান পরিচর্যা বা অর্গানিক চাষের প্রশিক্ষণ আপনার জন্য উপযুক্ত। নিজের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সাথে বা বন্ধুদের সাথে আলোচনা করুন। তাদের পরামর্শ আপনাকে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন, শেখার কোনো বয়স নেই, শুধু আগ্রহটাই আসল।

বাজারের চাহিদা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

প্রশিক্ষণ বেছে নেওয়ার সময় বাজারের চাহিদা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কেও ধারণা থাকা উচিত। আমি সবসময় বলি, আপনি যে দক্ষতা অর্জন করছেন, সেটির কি বর্তমানে বা ভবিষ্যতে চাহিদা থাকবে? যেমন, ডিজিটাল মার্কেটিং বা কম্পিউটার সম্পর্কিত দক্ষতাগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই দক্ষতাগুলো আপনাকে ঘরে বসেও কাজ করার সুযোগ করে দেবে। আবার হস্তশিল্প বা স্থানীয় খাবার তৈরির মতো ঐতিহ্যবাহী কাজেরও একটি নির্দিষ্ট বাজার রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে আপনি নিজের সৃজনশীলতা প্রয়োগ করতে পারবেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে অনলাইনে গবেষণা করুন বা যারা এই কাজগুলো করছেন তাদের সাথে কথা বলুন। তাদের অভিজ্ঞতা আপনাকে মূল্যবান তথ্য দেবে। কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। এটি আপনাকে সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে এবং আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে।

প্রশিক্ষণের ধরন প্রবীণদের জন্য সুবিধা সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্র
কম্পিউটার ও ডিজিটাল লিটারেসি প্রযুক্তির সাথে পরিচিতি, অনলাইন যোগাযোগ ও ব্যাংকিং ফ্রিল্যান্স ডেটা এন্ট্রি, অনলাইন টিউশন, ব্লগিং
হস্তশিল্প ও কারুশিল্প সৃজনশীলতা প্রকাশ, ঘরে বসে কাজ অনলাইন/অফলাইন হস্তশিল্প বিক্রি, প্রদর্শনী
রান্না ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিজের পছন্দের কাজ, কম বিনিয়োগ কেটারিং, আচার/পিঠা তৈরি, অনলাইন ফুড ডেলিভারি
বাগান পরিচর্যা ও অর্গানিক চাষ শারীরিক কার্যকলাপ, প্রকৃতির সান্নিধ্য বাসা/অফিস বাগান পরিচর্যা, নার্সারি
অনলাইন টিউশন ও মেন্টরশিপ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া, জ্ঞান দান বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিক্ষকতা, পরামর্শদাতা

글을 마치며

বয়স আসলে শুধু একটি সংখ্যা মাত্র, যা আমাদের অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। এই পোস্টে আমরা দেখেছি কিভাবে জীবনের শেষ বেলায় এসেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা যায়, নতুন দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে আরও স্বাবলম্বী করা যায় এবং সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে অবদান রাখা যায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যখন আপনি নতুন কিছু শেখার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাবেন, তখন আপনার পথ আরও মসৃণ হবে। মনে রাখবেন, আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই বয়সেও নিজেদেরকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি এবং জীবনকে উপভোগ করার নতুন পথ খুঁজে নিই।

Advertisement

알া দুলে 쓸মো 있는 정보

1. আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। যে কাজটি করতে আপনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, সেটিকেই আপনার নতুন যাত্রার ভিত্তি বানান।

2. ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে থাকবেন না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন প্রবীণদের জন্যেও অসংখ্য সুযোগ নিয়ে এসেছে।

3. সামাজিক মেলামেশা বাড়ান। কমিউনিটি সেন্টারের কার্যক্রমে অংশ নিন বা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হন।

4. সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকুন। অনলাইনে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার আগে দু’বার ভাবুন এবং সতর্ক থাকুন।

5. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রতি নজর দিন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, হাঁটাচলা এবং মেডিটেশন আপনার জীবনকে আরও সতেজ রাখবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এক নজরে

এই পুরো আলোচনায় আমরা জীবনের শেষ লগ্নে এসেও কীভাবে নিজেদেরকে আরও বেশি অর্থবহ এবং সক্রিয় রাখতে পারি, তার একটি সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছি। আমার মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বয়সকে কোনো সীমাবদ্ধতা হিসেবে না দেখা। বরং, এটিকে নতুন কিছু শেখার এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। আমি নিজের চোখে দেখেছি, যাদের মধ্যে শেখার আগ্রহ থাকে, তারা যেকোনো বয়সেই সফল হতে পারে। ডিজিটাল বিশ্ব আমাদের জন্য অসংখ্য দরজা খুলে দিয়েছে, যেখানে ঘরে বসেই আমরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারি, নতুন মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি এবং এমনকি আর্থিক দিক থেকেও স্বাবলম্বী হতে পারি।

তবে, এই যাত্রায় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। যেমন, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক, কারণ অনলাইনে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা কম নয়। আমি সবসময় বলি, যেকোনো অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নিন। এছাড়া, শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কারণ সুস্থ শরীর এবং সতেজ মনই নতুন কিছু শেখার বা করার জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।

সবশেষে, আমি বলতে চাই, আপনার অভিজ্ঞতা সমাজের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। আপনার জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম বা স্বেচ্ছাসেবকের কাজের মাধ্যমে আপনি সমাজে অবদান রাখতে পারেন এবং একই সাথে নিজের আত্মমর্যাদাও বাড়াতে পারেন। এই ধরনের সামাজিক সম্পৃক্ততা আপনাকে একাকীত্ব থেকে দূরে রাখবে এবং আপনার জীবনকে আরও আনন্দময় করে তুলবে। তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে এই নতুন দিগন্তে পা বাড়াই এবং প্রমাণ করি যে, বয়স সত্যিই শুধু একটি সংখ্যা।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: প্রবীণ বয়সে নতুন করে কর্মজীবন শুরু করার জন্য কী ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণগুলি সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে?

উ: আরে, কী যে বলেন! বয়স বাড়লে কি সত্যিই সব ফুরিয়ে যায়? আমার তো মনে হয়, প্রবীণ বয়সে নতুন কিছু শেখার আগ্রহটা আরও বাড়ে!
আমি নিজে দেখেছি, আজকাল অনেক চমৎকার প্রশিক্ষণ আছে যা প্রবীণদের জন্য দারুণ উপযোগী। ধরুন, কম্পিউটার ও ডিজিটাল দক্ষতা শেখাটা এখন খুবই জরুরি। বেসিক কম্পিউটার অপারেশন, ইন্টারনেট ব্যবহার, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের মতো কোর্সগুলো প্রবীণদের ঘরে বসেই ছোটখাটো কাজ করার সুযোগ করে দেয়। অনলাইন থেকে আয় করা এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব!
এছাড়া, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিংয়ের মতো ক্রিয়েটিভ কাজগুলোও তাঁরা শিখতে পারেন। কারুশিল্প বা হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ যেমন – সেলাই, নকশীকাঁথা, বা বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জিনিস তৈরি করাও খুব জনপ্রিয়। এগুলো একদিকে যেমন সৃজনশীলতাকে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনই ঘরে বসে বাড়তি আয়ের পথ খুলে দেয়। রান্না বা বেকিংয়ের মতো কোর্স করেও অনেকে ছোট ব্যবসা শুরু করছেন, যা তাঁদের পরিচিতি বাড়াচ্ছে। মনে রাখবেন, শেখার কোনো বয়স নেই, শুধু একটু ইচ্ছাশক্তি আর সুযোগের দরকার। এই ধরনের প্রশিক্ষণগুলো প্রবীণদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়, যা আমি বারবার লক্ষ্য করেছি।

প্র: এই প্রশিক্ষণগুলো শুধু আর্থিক স্বাবলম্বীই নয়, প্রবীণদের জীবনে আর কী ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে?

উ: একদম ঠিক ধরেছেন! বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ শুধু টাকার জন্য নয়, এর পেছনের গল্পটা আরও অনেক গভীর। আমি নিজে অনুভব করেছি, আর অনেকের ক্ষেত্রেই দেখেছি, নতুন কিছু শেখার সুযোগ পেলে প্রবীণদের মুখে যে হাসি ফোটে, তার মূল্য অনেক বেশি। এর সবচেয়ে বড় দিক হলো, একাকীত্ব দূর হয়। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেলে বা অনলাইনে ক্লাস করলে নতুন মানুষের সাথে মেশার সুযোগ হয়, এক ধরনের সামাজিক বন্ধন তৈরি হয়। এটা তাঁদের মনকে সতেজ রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। নতুন দক্ষতা অর্জন করলে নিজেদের আরও বেশি মূল্যবান মনে হয়, আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। সমাজে তাঁরা যে এখনও অবদান রাখতে পারছেন, এই অনুভূতিটা তাঁদের জীবনকে নতুন অর্থ দেয়। এছাড়াও, নিয়মিত পড়াশোনা বা নতুন কাজ শেখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো থাকে, যা আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এটা শুধু তাঁদেরই নয়, পরিবারের সদস্যদেরও আনন্দ দেয়। আমার মতে, প্রবীণদের সক্রিয় ও সম্মানিত জীবন নিশ্চিত করার জন্য এই প্রশিক্ষণগুলো এক দারুণ হাতিয়ার।

প্র: একজন প্রবীণ ব্যক্তি কিভাবে এই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগগুলো খুঁজে বের করতে পারেন এবং সফলভাবে তাতে যুক্ত হতে পারেন?

উ: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন! সুযোগগুলো তো আছে, কিন্তু সেগুলো খুঁজে বের করা এবং সেগুলোতে যুক্ত হওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমার পরামর্শ হলো, প্রথমে আপনার এলাকার স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর বা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা। সরকারের পক্ষ থেকে প্রবীণ এবং যুবকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা থাকে, যেখানে খুবই কম খরচে বা বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও প্রবীণদের জন্য নানান ধরনের দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে। যেমন পিকেএসএফ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো “প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি” বাস্তবায়ন করছে, যেখানে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ ও ঋণের সুবিধাও থাকে। অনলাইনেও অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে প্রবীণদের জন্য সহজবোধ্য কোর্স পাওয়া যায়। পরিবারের তরুণ সদস্যদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে এসব কোর্স খুঁজে বের করতে। আমার মনে হয়, সবচেয়ে জরুরি হলো নিজের আগ্রহের ক্ষেত্রটা খুঁজে বের করা এবং সেই অনুযায়ী খোঁজখবর নেওয়া। কোনো ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তির আগে সেখানকার পরিবেশ এবং শিক্ষকদের সম্পর্কে একটু জেনে নিলে আরও ভালো হয়। সব বাধা পেরিয়ে একবার যদি শুরু করা যায়, দেখবেন নতুন এক জগৎ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!

Advertisement